মানবীয় ভূগোলের শাখা সমূহ (Branches of Human Geography) :
প্রকৃতির প্রধান ফসলরূপে মানুষ এবং তার যাবতীয় কার্যাবলির পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে মানবীয় ভূগোলের বেশ কতকগুলি স্বতন্ত্র শাখার জন্ম হয় যেগুলিকে বাদ দিয়ে মানবীয় ভূগোল বিশ্লেষণ করা যায় না। সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতি প্রভৃতি নানান প্রেক্ষাপটে গড়ে ওঠা মানবীয় ভূগোলের বেশ কয়েকটি প্রধান শাখা এখানে আলোচিত হল
1. জনসংখ্যা ভূগোল (Population Geography) :
মানবীয় ভূগোলের যে শাখায় জনসংখ্যার বণ্টন, প্রকৃতি,বিবর্তন, প্রজনন, পরিব্রাজন, জনসংখ্যার বৃদ্ধি ও গতিপ্রকৃতি, জনঘনত্ব প্রভৃতি বিজ্ঞানসম্মত ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়, তাকে জনসংখ্যা ভূগোল (Population Geography) বলে।
সাম্প্রতিক উপাদান :
বর্তমানে জনসংখ্যা ভূগোলে আরো কতকগুলি উপাদান বিশেষভাবে স্থান পেয়েছে, যেমন--মানবসম্পদ উন্নয়ন, মানুষের জীবিকা, বেকারত্ব, কাম্যজনসংখ্যা, জনস্বল্পতা, জীনাকীর্ণতা, জনবিস্ফোরণ, জনসংখ্যার সমস্যা, নারী উন্নয়ন, লিঙ্গ পক্ষপাতিত্ব, জনসংখ্যার বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক তত্ত্ব প্রভৃতি। প্রসঙ্গত পরিসংখ্যাবিদ্যার (Statistics) সুবাদে আধুনিক জনসংখ্যা ভূগোল “Demography"-তে উপনীত হয়েছে।
নিবেশিত ভৌগোলিক :
ভৌগোলিক G. T. Trewartha সর্বপ্রথম জনসংখ্যা ভূগোলকে শাস্ত্ররূপে উন্নীত করলেও পরবর্তী সময়ে জন আই. ক্লার্ক, জেলনিস্কি, ম্যালথাস, ডাব্লিউ টমসন, উড, আর. সি. চন্দ, জি. ই. ডেমকো, বিজু গার্নিয়ার প্রমুখ জনসংখ্যা ভূগোলের আলোচনায় বিশেষ অবদান রেখেছেন।
পরিধি :
জনসংখ্যা ভূগোলের প্রাসঙ্গিকতা বা ভবিষ্যৎ পরিধি খুবই সুবিস্তৃত। যেমন—
(i) জনসংখ্যা ভূগোল থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান পৃথিবীতে মানুষের সুষ্ঠু বণ্টন সম্পর্কে ধারণা দিয়ে, স্থিতিশীল বাসস্থান গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
(ii) পৃথিবীব্যাপী মানুষের বিভিন্ন সমস্যা অনুধাবন করতে সামর্থ্য হয় জনসংখ্যা ভূগোল।
(iii) অঞ্চলভিত্তিক জনসংখ্যাকেন্দ্রিক যাবতীয় পরিকল্পনা রূপায়ণে জনসংখ্যা ভূগোলের ধারণা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
(iv) সমাজে লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাস ঘটিয়ে সামাজিক স্থিতিশীলতা আসে জনসংখ্যা ভূগোল পাঠের মাধ্যমেই আসে।
(v) জনসংখ্যা ভূগোল প্রত্যেক মানুষকে উন্নয়নভিত্তিক বিভিন্ন পথ নির্দেশিকা দিয়ে থাকে।
2. জনবসতি ভূগোল (Settlement Geography :
মানবীয় ভূগোলের যে শাখায় জনবসতির উৎপত্তি, বিকাশ, বিবর্তন, বিন্যাস প্রভৃতি বিষয়গুলি নিয়ে আলোচিত হয় তাকেই জনবসতি ভূগোল (Settlement Geography) বলে।
সাম্প্রতিক উপাদান :
সাম্প্রতিক কালে জনবসতি ভূগোলের আলোচ্য বিষয়গুলি যথেষ্ট গভীরতর হয়েছে। এখানে বর্তমানে গ্রাম ও শহরভিত্তিক বিভিন্ন বসতির বিন্যাস, বসতি পরিকল্পনা, স্থায়ী ও অস্থায়ী বসতি, জাভি (caste) এবং মর্যাদা (status) ভিত্তিক বাসগৃহ, পরিত্যক্ত বসতি বিন্যাস প্রভৃতি বিষয়গুলি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হচ্ছে। সম্প্রতি 2015 সালে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ছিটমহল এলাকা বণ্টন বিষয়টিও জনবসতি ভূগোলে স্থান পেয়েছে।
নিবেশিত ভৌগোলিক :
জনবসতি ভূগোলে বিশেষ অবদান রেখেছেন ভৌগোলিক স্মিথ, ডিকেন, পিট, ফিও, হ্যারিস, নেলসন ম্যাক্সওয়েল, প্যাট্রিক গ্যাডেস, ই, ডব্লি বার্জস, ম্যাকেখি, ওয়ালটার ক্রিসটেলার প্রমুখ।
পরিধি :
জনসবতি ভূগোলের প্রাসঙ্গিকতা অত্যন্ত বহুমুখী যেমন
(i) জনবসতি ভূগোল পাঠের মধ্য দিয়ে মানুষের বেঁচে থাকার অন্যতম একটি মৌলিক প্রয়োজনীয় উপাদানরূপে বাসস্থান সংক্রান্ত যাবতীয় ধ্যানধারণা পাওয়া সম্ভব।
(ii) এখানে মানুষ-পরিবেশ-আক্রাম্বলের মধ্যে গড়ে ওঠা একটি সমন্বয়ী সম্পর্কের বিস্তার ঘটে।
(iii) জনবসতি ভূগোলের ধারণাকে কাজে লাগিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বসতি সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা সহজেই দুরীভূত করা যায়।
(iv) এখানকার বসতি সম্পর্কিত জ্ঞান, গ্রাম ও শহরভিত্তিক বিভিন্ন পরিকল্পনাগুলির বাস্তবায়ন ঘটাতে সাহায্য করে।
3. সামাজিক ভূগোল (Social Geography)
বিভিন্ন সামাজিক প্রেক্ষাপটে সমাজবদ্ধ জীবরূপে যাবতীয় মানবায় কার্যকলাপ নিয়ে বিশ্লেষণ করে সামাজিক ভূগোল (Social Geography)। এখানে সমাজের গঠন, পরিবার, সামাজিক রীতিনীতি, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, সামাজিক স্তবায়ন, সামাজিক সংগঠন, সামাজিক ব্যবহার প্রভৃতি মুখ্য আলোচ্য বিষয়।
,Eyles বলেছেন—“সমাজ ভূগোল হল পৃথিবীপৃষ্ঠে মানুষের সামাজিক বিষয়ের বিশ্লেষণ"।
সাম্প্রতিক উপাদান :
বর্তমানে সামাজিক ভূগোলে তিনটি দৃষ্টিভঙ্গি বিশেষভাবে স্থান পেয়েছে আংশিক সৃষ্টিভঙ্গি, প্রণালীবদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি এবং সর্বাঙ্গীণ দৃষ্টিভঙ্গি। প্রসঙ্গত সাম্প্রদায়িকতা, পণপ্রথা, হঠাচার, সামাজিক সাব্বা, সামাজিক দুর্ঘটনা, প্রতিহিংসা প্রভৃতি বিষয়গুলি সমসাময়িকতার ভিত্তিতে আলোচিত হচ্ছে।
নিবেশিত ভৌগোলিক :
সামাজিক ভূগোলে যে সমস্ত ভৌগোলিক বিশেষ অবদান রেখেছেন, তাঁরা হলেন জনস্টন, হাউসটন, ওয়াটসন, স্মিথ, ভ্যালগ, ম্যাঝাইভার, রাইট মিল, কুলি প্রমুখ। প্রসাত ডেমোল্যা হলেন সামাজিক ভূগোলের জনক।
পরিধি :
বিষয়গত দিক থেকে সামাজিক ভূগোলের পরিধি সুবিস্তৃত
(i) সামাজিক ভূগোলের বিভিন্ন নির্দেশিকাগুলি স্থান ও কালভেদে যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক।
(ii) সামাজিক ভূগোল আতি-ধর্ম-বর্ণ-ভাষা প্রভৃতির ভিত্তিতে মানুষকে তার নিজস্ব সভায় উদবুদ্ধ করে।
(ii) সামাজিক উন্নতির নানান প্রতিফলন ঘটে সামাজিক ভূগোলের বিশ্লেষণে।
(iv) সামাজিক ভূগোল সমাজের ব্যাধিগুলি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে সুস্থ সমাজ গড়ে তোলে।
4. সাংস্কৃতিক ভূগোল (Cultural Geography):
মানবীয় ভূগোলের এই শাখায় স্থান ও কালভেদে সভ্যতার উৎকর্ষগত বিভিন্ন বৈচিত্র্যপূর্ণ রীতিনীতির ওপর বিশ্লেষণ করা হয়ে থাকে। এখানে মানুষের সভ্যতা, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্র, সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, সাংস্কৃতিক সংগঠন, দক্ষতা প্রভৃতি বিশেষভাবে আলোচিত হয়।
সাম্মাধিক উপাদান :
সাংস্কৃতিক ভূগোলে বর্তমানে মিশু সংস্কৃতি, সাংস্কৃতিক বৈষম্য, অসংগত সাংস্কৃতির বিভাজন, সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, আদিবাসী সংস্কৃতি বিশেষভাবে স্থান পেয়েছে।
নিবেশিত ভৌগোলিক
সাংস্কৃতিক ভূগোলে দান রেখেছেন উইলিয়াম জেমস, আটা, মণি রায়কেন প্রমুখ। প্রসঙ্গত কর্ম ও সংঘরকে বলা হয় সাংস্কৃতিক ভূগোলের জনক।
পরিধি :
(i) সাংস্কৃতিক ভূগোল মানবসংস্কৃতির বিকাশ এটি সমাজ থেকে অপসংস্কৃতিগুলি দূর করা।
(ii) সাংস্কৃতিক ভূগোলের ব্যানার এক দেশ থেকে দেশে পিটিয়ে বিশ্বযোগ হাত করে।
(iii) সাংস্কৃতিক ভাংগালের সাক্ষ্য পরিবর্তনশীল মানবসভ্যতার সঙ্গে সামুয্য রেখে মানবসভ্যতাকে উন্নততর
(iv) সাংস্কৃতির উৎকর্ষতা উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক নোগরপশন ঘটায়।
5. ঐতিহাসিক ভূগোল (Historical Geography):
মাননীয় ভূগোলের যে শাখা অতীত কাল থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত মানুষের বিবর্তনমূলক নানান প্রেহ্মগেট এবং কালভিত্তিক ঘটনাবলির নানান নিয়ে আলোচনা করে, তাকেই ঐতিহাসিক ভূগোল বলে। এখানে সময়কাল, মনুষ্যসৃষ্ট ঘটনা পরম্পরা, সান ও কালভিত্তিক তথ্য, বিগ্রহ প্রভৃতি বিশেষভাবে স্থান পায়।Hartshorne বলেছেন- সময়ের প্রেক্ষাপটে ঘটনার বিবরণী হল ইতিহাস আর সম্মানের পটভূমিতে সেটাই হল ঐতিহাসিক ভূগোল।
সাম্প্রতিক উপাদান:
ঐতিহাসিক ভূগোলে সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ সত্যতা যাচার, নতুন তথ্য উন্মাদন, সময়ের নিরিখে এটান সভ্যতার পরিবর্তনশীলতা ও বর্তমানে তার প্রাদশিকতার মালেকা সুগভাবে করা হচ্ছে।
নিবেশিত ভৌগোলিক
ঐতিহাসিক রোডোটাসের চিন্তাধারানো অবলম্বন করে এই শাখার উৎপত্তি পরবর্তীকালে বেল, বেয়ার, পুঁটলিন প্রমুখ ঐতিহাসিক ভূগোল সম্পর্কে তাদের সুস্পষ্ট দেন।
পরিধি
(I) ঐতিহাসিক ভূগোল সুপ্রাচীন কাল থেকে মানব বিবর্তনের ধারাবাহিক দৃষ্টান্তগুলির নাস্তবতা আমাদের কাছে তুলে ধরে।
(II) ঐতিহের মানব জীবনে নেচে থাকার মূল্যবোধকে করে ঐতিহাসিক ভূগোল।
(iii) অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে ভবিষ্যতের নানা পরিকল্পনা রূপায়ণের পদক্ষেপ গ্রহণে এটি সাহায্য করে।
(iv) ঐতিহাসিক ভূগোলের অভিজ্ঞতা আগামী দিনের কোনও সম্ভাব্য ঘটনার আগাম পূর্বাভাস দিয়ে মানুষকে সচেতন করে তোলে।
6. রাজনৈতিক ভূগোল (Political Geography)
মানবীয় ভূগোলের যে শাখায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে বিভিন্ন রাষ্ট্রকেন্দ্রিক বিভিন্ন লোকায়ত কার্যাবলি নিয়ে আলোকপাত করা হয়, তাকেই রাজনৈতিক ভূগোল (Political Geography) বলে। বিভিন্ন আঞ্চলিক ঘটনা প্রবাহ, মান সম্পদের অধিকার বর্ণন, জাতীয়তাবাদ, বিচ্ছিন্নতাবান, রাজনৈতিক অবস্থা প্রভৃতিকে রাজনৈতিক ভূগোলের গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়বস্তুরূপে দশা হয়।
সাম্প্রতিক উপাদান
রাজনৈতিক ভূগোলের সাম্প্রতিক উপাদান হিসেবে এখানে বর্তমানে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক। কূটনীতি, অলসীমার অধিকার, রাষ্ট্রজেট, স্যাকার ও তার নির্বাচন প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রীয় সংগঠন, রাষ্ট্রীয় আহাসেন, পরমাণ্ডুপ্তি, উত্তেজনা প্রশমনকারী বিভিন্ন পদক্ষেপ প্রভৃতি মুখ্য আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে।
নিবেশিত ভৌগোলিক:
স্যার উইলিয়ান পেটি সাদশ শতকে তাঁর "Essays on Political Arithmatic রাজনৈতিক ভূগোলকে প্রথন তুলে ধরলেও ফ্রেডারিখ বাটিলে "Politische Geographie
মাধ্যমে এই শাখাকে আর বিজ্ঞানসম্মত করে তোলেন। তাই রাটিলেকে বলা হয় রাজনৈতিক ভূগোলের জনক।
পরিধি:
(i) রাজনৈতিক ভূগোলের ব্যানধারণা ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের অন্তর্গত জনগণের কল্যাণসাধন করে।
(II) রাজনৈতিক ভূগোলের মতাদর্শ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সহাযোগী হয়।
(ill) রাজনৈতিক ভূগোল পাঠের মধ্য দিয়ে জাতীয়তাবোধ এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়।
(iv) রাজনৈতিক ভূগোল কোনও অঞ্চলকে 'Political Unit গণ্য করে সেখানে রাষ্ট্রের উন্নয়নমুখী যে কোনও বরনের পরিকল্পনা বাস্তব রূপায়ণ ঘটায়।
7. অর্থনৈতিক ভূগোল (Economic Geography) :
মানবীয় ভূগোলের যে শাখায় মানুষের দৈনন্দিন জীবনের একাধিক অর্থনৈতিক কর্মধারা এবং কর্মকেন্দ্রিক পরিবেশ নিয়ে সুস্পষ্টভাবে আলোচনা করা হয়, তাকে অর্থনৈতিক ভূগোল বলে। অর্থনীতির (Economic) সঙ্গে বিষয়টি গভীরভাবে সম্পর্ক যুক্ত হওয়ায় এখানে স্থানগত বৈষম বণ্টন, কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, পরিবহণ প্রভৃতি বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়।
সাম্প্রতিক উপাদান :
বর্তমানে অর্থনৈতিক ভূগোলের আলোচ্য বিষারূপে তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক অর্থনীতি, ভোগ্যপণ্য, উদবৃত এলাকা, সম্পর্ক ব্যাবস্থাপনা, অর্থনৈতিক তত্ত্ব প্রভৃতি বিশেষভাবে স্থান পোড়াচ্ছে।
নিবেশিত ভৌগোলিক :
অর্থনৈতিক ভূগোলে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন জিমারম্যান, অনগুলেন, আগষ্টিলোশ, ওয়েবার, স্ট্যাম্প, উইভার, রিকার্ডো প্রমুখ।
পরিধি :
(i) অর্থনৈতিক ভূগোলের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্য দিয়ো নতুন নতুন কর্মক্ষেত্রের উদ্ভাবন ঘটানো যায়।
(ii) কৃষি, শিল্প, ব্যাবসাবাণিজ্য, পরিবহণ প্রভৃতি ক্ষেত্রের মূর্ত উন্নয়ন ঘটানো যায়।
(iii) অর্থনৈতিক ভূগোলের তাত্ত্বিক মূল্যবোধগুলি আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীকরণের প্রেরণা জোগায়।
(iv) যে-কোনও ধরনের আর্থিক পরিকল্পনা রূপায়ণে অর্থনৈতিক ভূগোলের বিভিন্ন তত্ত্বকে কাজে লাগানো যায়।
8. আঞ্চলিক ভূগোল (Regional Geography) :
মানবীয় ভূগোলের এই শাখাটি প্রকৃতি ও মানবীয় উপাদানের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে। এখানে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলকে কয়েকটি অংশে বিভক্ত করে উন্নয়নমুখী নানান পরিকল্পনা আধুলিক ভূগোলে নেওয়া হয়। আঞ্চলিক ভুগোলে কোনও অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি, নদনদী, জলবায়ু, মুক্তিকা, স্বাভাবিক উদ্ভিদ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন দিক দিয়ে আলোচনা করা হয়।
সাম্প্রতিক উপাদান :
বর্তমানে আঞ্চলিক ভূগোলে স্প্যানিক বিশ্লেষণ, আঞ্চলিক জনগোষ্ঠীর ভূমিকা, আঞ্চলিক মিথস্ক্রিয়া, আঞ্চলিক পৃথকীকরণ প্রভৃতি বিষয়ে জোর দেওয়া হয়।
নিবেশিত ভৌগোলিক :
ভূগোলের সমৃদ্ধিতে যে সমস্ত ভৌগোলিকদের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখ্য, তাঁরা হলেন—হাটশোন, স্ট্যাম্প, গিলবার্ট. এস. পি. চ্যাটার্জী। প্রসঙ্গত কার্ল রিটার হলেন আঞ্চলিক ভূগোলের জনক।
পরিধি :
(i)পৃথিবীর কোনও অঞ্চলের প্রাকৃতিক ও অপ্রাকৃতিক উপাদানগুলি আঞ্চলিক ভূগোলের মাধ্যমেই স্পষ্ট স্বীকৃতি পায়।
(ii) কোনও অঞ্চলের পরিকল্পনা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ভূগোলের গুরুত্ব অপরিসীম।
(iii) আঞ্চলিক বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে ভৌগোলিক মডেলগুলিকে সহজেই প্রতিষ্ঠা করা যায়।
(iv) যে কোনও ধরনের আর্থিক পরিকল্পনা রূপায়ণে অর্থনৈতিক ভূগোলের বিভিন্ন তত্ত্বকে কাজে লাগানো হয়।
9. চিকিৎসা ভূগোল (Medical Geography)
মানবীয় ভূগোলের যে আধুনিকতম শাখায় বিভিন্ন রোগের ভৌগোলিক কণ্টন, রোগের উৎস অনুসন্ধান, রোগ প্রকোপে পরিবেশগত প্রভাব, রোগ সম্পর্কে সচেতনতা প্রভৃতি বিষয় নিয়ে বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা করা হয়, তাকেই চিকিৎসা ভূগোল (Medical Geography) বলে।
সাম্প্রতিক উপাদান : যদিও চিকিৎসা ভূগোলটি মানবীয় ভূগোলের আধুনিকতম শাখা, তা সত্ত্বেও এই বিষয়টিতে জনস্বাস্থ্য, চিকিৎসা পরিসেবা, পরিবার পরিকল্পনা, মহামার মরনশীলতা, রোগীর পরিবেশগত কারণ বিশ্লেষণ প্রভৃতির অন্তভুক্তি ঘটেছে।
নিবেশিত ভৌগোলিক : প্রাচীন গ্রিসে হিমোক্রেটিস চিকিৎসা শাস্ত্রে মানুষের বসবাসযোগ্য স্থান এবং স্বাস্থ্যের মধ্যে সম্পনকের প্রথম গড়ে তোলেন। পরবর্তীকালে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পরিবেশগত বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে মানবদেহে চাপ বৃদ্ধি-সহ একাধিক ঝুঁকির পরিপ্রেক্ষিতে চিকিৎসা ভূগোল জনপ্রিয়তা পায়। এক্ষেত্রে কেলভিন জন, সক্রেটিস, জন স্নো, উইলিয়াম জর্জ প্রমুখ চিকিৎসা ভূগোলকে সমৃদ্ধ করেন।
পরিধি :
(i) বর্তমানে পরিবেশগত সমস্যাবলির নিরিখে চিকিৎসা ভূগোল বিভিন্ন রোগ ট্র্যাকিং করছে।
(ii) Telemedicine পরিসেবার মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ছে।
(iii) চিকিৎসা ভূগোলের সুবাদে খাদ্যের সঙ্গে বিভিন্ন রোগের সম্পর্ক বিষয়ক গবেষণা সহজতর হয়েছে।
(iv) বর্তমানে চিকিৎসা ভূগোলের প্রেক্ষাপটে স্যানিটারী বিপ্লব অন্তর্ভুক্তির দ্বারা সুস্থ সমাজ গড়ে উঠেছে।